সম্ভবত ৩০ জুলাই রাত। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও প্রশাসনিক চাপে নিজের জন্মভূমি গোপালগঞ্জ ছেড়ে আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হন মোল্লা ভাই। গন্তব্যহীন এক মুসাফিরের মতো তিনি আশ্রয় নেন বাগেরহাটের এক আত্মীয়ের বাড়িতে। ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকায় পরিবার, সহযোদ্ধা ও বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন তিনি।
এক অনিশ্চিত জীবনের পথে তখন দাঁড়িয়ে, কী করবেন তা বুঝতে পারছিলেন না। দিন-রাত শুধু ভাবতেন, কবে হাসিনার পতন হবে, কবে মুক্তি পাবে দেশের মানুষ। মানসিক দুশ্চিন্তায় রাতের ঘুমও হারাম হয়ে যায়।
৫ আগস্ট দুপুর একটার দিকে, যোহরের আজানের সময় তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় হঠাৎ কানে আসে ফিসফিস আওয়াজ — কেউ যেন বলছে, “হাসিনা তো পালিয়ে গেল, এখন দেশের প্রধানমন্ত্রী কে হবে? তারেক রহমান কি দেশে আসবে?” মনে হচ্ছিল, হয়তো স্বপ্ন দেখছেন।
কিছুক্ষণ পর ঘুম ভেঙে গেলে তিনি চুপচাপ ফোন হাতে নিয়ে দেখেন, ইন্টারনেট চালু হয়েছে কিনা। ডাটা সংযোগ চালু করার সঙ্গে সঙ্গেই ফোনে একের পর এক কল ও মেসেজ আসতে থাকে। সারা দেশের সহযোদ্ধা, পরিবার ও বন্ধুদের বার্তায় ফোন কেঁপে উঠতে থাকে। দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঢুকে দেখতে পান, জাতীয় টেলিভিশনগুলোতেও সংবাদ প্রচার হচ্ছে — হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।
এ খবর নিশ্চিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চোখ দিয়ে অজান্তেই অশ্রু ঝরে পড়ে। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে বলেন — আলহামদুলিল্লাহ।
মোল্লা ভাই জানান, ২০১৯-২০ সালের দিকে ভিপি নূরের রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে হাসিনা বিরোধী ভয়েস হিসেবে এলাকায় আওয়ামী লীগের টার্গেটে ছিলেন তিনি। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচনের আগে ও পরে গণঅধিকার পরিষদের ব্যানারে রাজপথে সক্রিয় ছিলেন।
কোটা আন্দোলন শুরু হওয়ার পর প্রথম দিকে তিনি সরাসরি রাজপথে না থাকলেও অনলাইনে নিরপরাধ ছাত্রদের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন। কিন্তু আবু সাঈদ শহীদ হওয়ার পরে মনে করেন, আর ঘরে বসে থাকার সময় নেই। তখন সরাসরি রাজপথে নেমে আসেন। পূর্ব থেকেই আওয়ামী লীগ বিরোধী অবস্থানে থাকার কারণে, অন্যদের তুলনায় তার ওপর রাজনৈতিক চাপও ছিল বেশি।